মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা দেশকে এগিয়ে নিতে দিবে না : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের শত্রু বাইরে থেকে আসা না লাগে না; দেশের ভিতরেও আছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বা পঁচাত্তরের খুনি বা তাদের আওলাদ-বুনিয়াদ যারা আছে, এরা কখনও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না; বাধা দেবে, কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করে তো আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা এগিয়ে যাব। কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।
রবিবার ( ৮ অক্টোবর ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ভবন ও জিইএমএস সফটওয়্যার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর কথা ‘আমার মাটি আছে, আমার মানুষ আছে। এই মাটি মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ব’ বক্তব্য আমি ধারণ করি। বিশ্বাস করি, যে কারণে আমরা ২০৪১-এর প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিয়ে গেলাম।
এসময় বাংলাদেশকে জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা করতে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেদিকে নবীন কর্মকর্তাদের নজর দিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোনো দূষণ করি না। আমাদের প্রত্যেকটা পরিকল্পনা গ্রহন করা হয় এমনভাবে যেন আমরা দূষণ থেকে মুক্তি পাই; জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে মুক্তি পাই।’
নবীন কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করার সময় কিছু বিষয়ের দিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদীনালা, খাল-বিল জলাধারগুলো যেন ঠিক থাকে। উন্নয়ন তো করতে হবে। রাস্তাঘাটও করতে হবে, কিন্তু আমাদের দেশের ছয় ঋতু। বিভিন্ন ঋতুতে যে পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের প্রত্যেকটা পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে কোনো সময়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। আর মানুষগুলোর যেন আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ে। কীভাবে করলে আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়বে সেটাই দেখতে হবে।’
মানুষের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকার যে কাজগুলো করে যাচ্ছে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে নেই। একসময় যে বাংলাদেশকে বিদেশিরা দেখলে মনে করত যে বাংলাদেশ দিয়ে কিছুই হবে না, ঝড়বৃষ্টি এটা-সেটা নানা কথা শুনতে হতো, কষ্ট হতো এগুলি শুনলে। তখনই একটা জিদ চেপে গিয়েছিল ভিতরে; এমনভাবে দেশ গড়ে তুলব যেন বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই যেন অন্তত মাথা উঁচু করে বলে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন বলে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল; অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান। আমি তো সব থেকে পুরনো এখন নির্বাচিত সরকারপ্রধান। যাদের সঙ্গে দেখা হয়, অনেকে নবীন আছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে আপনার ম্যাজিকটা কী? আপনি কীভাবে এই দেশটাকে নিয়ে আসলেন। ছোট ভূখণ্ডের দেশ। ১৭ কোটি মানুষ। তো এদের খাবার এদের চিকিৎসা এদের জন্য এত কিছু কীভাবে করি?’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি আমার বাবার কথাটা মনে করিয়ে দিই। আর আমি বলি যে, সুর্নিদিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে করলে হবে। আমার দেশের মানুষগুলো হচ্ছে আমার বড় সম্পদ। সেটাই আশা করি শুধু নিজেরা না; সাথে সাথে মানুষের ভেতরে ওই চেতনাটা জাগাতে হবে। হ্যাঁ, অনেক রকম প্রতিবন্ধকতা আসবে।
অর্থনীতিতে চাপের কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে আমাদের অর্থনীতি কিছুটা চাপে আছে। মুদ্রাস্ফীতি, এই ব্যাপারেও সকলকে মাঠে গেলে একটু ব্যবস্থা নিতে হবে। সকলকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কোনো অনাবাদি জমি থাকবে না। যেখানে যতটুকু জমি আছে, আবাদ করতে হবে। ফসল আবাদ করে খাদ্য নিরাপত্তাটা রক্ষা করতে পারি। মানুষের খাদ্যটা যদি মানুষের হাতে দিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ‘আর আমাদের কিন্তু প্রচুর অনাবাদি জমি আছে। আমি আগে নিজে করি। তারপর কিন্তু সবাইকে বলি। নিজে না করে বলি না। গণভবন এখন একটা কৃষি খামার। কেউ চাইলে যেয়ে দেখে আসতে পারে। সেখানে পাঁচ প্রকারের ধানও লাগানো আছে।’